সকাল থেকেই বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টির টাপুরটুপুর শব্দে রোমাঞ্চিত হয়ে উঠেছে আশেপাশের পরিবেশ। বিছানা ছেড়ে বারান্দায় গিয়ে বসলাম। মা এসে বকাবকি করবে ভেবে একটা বইয়ো হাতে নিয়েছি। বেশ কিছুক্ষণ বুকের সাথে বই জড়িয়ে বৃষ্টি পরা দেখছি। হঠাৎ করেই ছোট বোন, আলো চলে এলো। বলা নেই কওয়া নেই, এসে আমার বই নিয়ে টানাটানি শুরু করে দিলো! আমি আতংকিত হয়ে বললাম, “আরে আরে! কি করসিস? ছিঁড়ে যাবে তো।” “দেও, আমি পড়বো। আমি পড়বো।” বলে কান্নাকাটি শুরু করে দিল। কিছুক্ষণ বুঝাতে চেষ্টা করলাম। বললাম, আমার এখন এই বইটি পড়তে হবে। অন্য একটা বই এনে দিতে চাইলাম। কিন্তু কোনো কিছুতেই কাজ হলো না। সে জেদ ধরেই আছে, এই বইটিই তাকে দিতে হবে। অবশেষে তার সাথে না পেরে বইটি দিয়ে অন্য একটি বই নিয়ে পড়তে বসলাম। বইটি পেয়ে একদৌড়ে সে মা’য়ের ঘরের চলে গেল। প্রায় দু-তিন ঘন্টা হয়ে গেছে, আলোর দেখা নেই! এতক্ষণ তার কথাবার্তাও শুনি নি। কিছু না ভেবেই মা’য়ের রুমের দিকে এগিয়ে গেলাম। পর্দা সরিয়ে দেখি, সে পিছন ফিরে কি যেন করছে। পাশে অনেকগুলো নৌকা আর প্লেন ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে রয়েছে। একটু কাছে যেতেই বুঝলাম, আমার দেয়া বইটি কেটেই সে এরকম মহৎকর্ম করেছে। দ্রুত তার কাছে গিয়ে বইটি ছিনিয়ে নিলাম। আর বললাম, “দাঁড়া আজকে তোর কপালে দুঃখ আছে, তুই কি না আমার বই দিয়ে নৌকা বানিয়েছিস?” বইটা হাতে নিয়ে রুমে চলে এলাম। বইটা রেখে ভাবছি, “মা’কে এসব বলে দেব। না হলে আমার দোষ হয়ে যাবে।” এসব ভাবতে ভাবতেই মা ডাকাডাকি শুরু করলো। আমিও হ্যা সূচক জবাব দিয়ে মায়ের সামনে হাজির হয়ে গেলাম। মা’য়ের চোখ আগুনের মত লাল হয়ে আছে, বোধহয় শরীর খারাপ করেছে। তাই বললাম, “মা তোমার কি শরীর খারাপ? ডাক্তার আঙ্কেলকে ডাকবো?” কথাটা মা কানেই তুললেন না। আমার দিকে রাগমিশ্রিত গলায় বললেন, “বই পড়তে ইচ্ছা করে না! তাই বই দিয়ে নৌকা-এরোপ্লেন বানানো হচ্ছে? দাঁড়াও আজ তোমার খবর আছে। তোমার বাবা আসুক, তারপর হবে।” আমি তো কথা গুলো শুনে বেশ চমকিয়ে গেলাম, মা’কে এসব কে বললো? পিছন ফিরে দেখি আলো খিকখিক করে হাসছে আর বলছে, “কি মজা কি মজা, ভাইয়া আজকে মার খাবে।” বেশ রাগ হলেও চুপচাপ মাথা নিচু করে ঘরে চলে এলাম। পরে অবশ্য মা সত্যটা আলোর মুখ থেকেই জেনেছিল। আলোকে কিছু না বললেও, আমাকে বই দেয়ার জন্য বকাবকি করতে ভুলে নি। পরদিন বাজার থেকে নতুন বই নিয়ে এসে বলেছিল, “নেও এই বইটাও আলোকে নৌকা বানাতে দিও।”